অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভোলায় নতুন গ্যাস কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়ায় ভোলাবাসী যেমন আনন্দিত হয়েছে তেমনি ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে এখানকার বাসিন্দারা। কারণ গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আগামী মাসেই ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নেয়ার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস চাই আন্দোলন কমিটি। তারা বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে ভোলা শহরের কে-জাহান মার্কেটের সামনে ভোলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আবাসিক গ্যাস সংযোগ ও গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোলাসহ ১১দফা দাবিতে মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে ভোলার সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে। পরে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের শহর প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে গত দুই দিন ধরে সংগঠনটি ভোলা শহরে লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণা চালায়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ঘরে ঘরে গ্যাস চাই আন্দোলন কমিটির সভাপতি মো. মোবাশি^র উল্যাহ চৌধুরী, দৈনিক আজকের ভোলার সম্পাদক মু. শহকাত হোসেন, জেলা জুয়োলারী সমিতির সভাপতি অবিনাশ নন্দি, ঘরে ঘরে গ্যাস চাই আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল নান্টু, ভোলা প্রেসক্লব সভাপতি অমিতাব রায় অপু, ভোলা হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল আলম, মো. জাকির হোসেন, মো. মহিউদ্দিন, এম শাহরিয়ার জিলন, হাফেজ বনি আমিন, রবিউল আলম প্রমূখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ভোলায় পর্যাপ্ত গ্যাস মজুদ রয়েছে এবং উত্তোলিত হচ্ছে। ভোলায় পর্যাপ্ত গ্যাস থাকা সত্ত্বেও শতাধিক ইট ভাটা, হোটেল রেস্তরা এবং গৃহস্থালি কাজে জ্বালানি হিসাবে বনের কাঠ উজার হচ্ছে। অথচ ঝড় জলোচ্ছ্বাসে বন আমাদের প্রতিরক্ষা দিচ্ছে। তাই উত্তোলিত গ্যাস ঘরে ঘরে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। সরকার সুন্দর বন গ্যাস কোম্পানির মাধ্যমে ঘরে ঘরে গ্যাস দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে ৪০ কিলোমিটার গ্যাস পাইপ লাইন বসিয়েছে। ২০১৩ সালে দুই হাজার ৩৫০টি পরিবারকে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। আরও ২০০ পরিবারকে সংযোগ দেয়ার জন্য ঘরের সামনে রাইজার স্থাপন করা হয়েছে এবং আরো চার হাজার পরিবারের কাছ থেকে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে ঘরে ঘরে গ্যাস দেয়া সরকারি সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানে ভোলাবাসীকে গ্যাস না দিয়ে ভোলার গ্যাস অন্যত্র নেওয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত হয়। আমাদের দাবি সরকারের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘরে ঘরে গ্যাস দেয়াসহ ভোলায় গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে হবে। তারপর অন্যত্র গ্যাস নেয়ার দাবি করেন তারা।
বক্তারা আরো বলেন, গ্যাস সমৃদ্ধ ভোলার উন্নয়নে আমাদের অন্যান্য দাবি গুলো হচ্ছে, ভোলায় ইপিজেড গড়ে তোলা, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন, ভোলায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও কলেজগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদ পূরণ করা, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করা, ভোলা-বরিশাল ব্রিজ নির্মাণ করা। এসকল দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কঠোর আন্দোরনের হুশিয়ারি দিয়ে তারা বলেন, যেহেতু ভোলায় একের পর এক গ্যাস কূপের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে তাই এ গ্যাসের দাবিদার সর্ব গ্রথমে ভোলার মানুষের। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে বরিশালের একটি জনসভায় ভোলা-বরিশাল সেতুর করার ঘোষণার পাশাপশি ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এ ঘোষণার এখনো বাস্তাবায়ন হয়নি। তাই আমাদের ১১দফা দাবি আাদায় না হলে জীবন দিয়ে হলেও ভোলার গ্যাস জেলার বাহিরে নেয়া প্রতিহত করা হবে। আর এ জন্য কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে এর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে নিতে হবে।
সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দ্বীপজেলা ভোলায় পূর্বের সাতটি গ্যাস কূপের পর অষ্টম কূপ ভোলা নর্থ-২ নামের আরো একটি কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ কূপটি সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের দক্ষিণ চরপাতা গ্রামে। পরীক্ষামূলকভাবে কূপটিতে আগুন প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন বাপেক্সর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী।
তিনি জানান, এ কূপটিতে ৩ হাজার ৫২৮ মিটার গভীরে গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বর্তমানে পরীক্ষার জন্য আগুন প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে। মজুদের বিষয়টি আরো কয়েকদিন পরে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে এই কূপ থেকে প্রতিদিন ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। এই কূপটি হচ্ছে সদর উপজেলার দ্বিতীয় কূপ এবং জেলায় অষ্টম কূপ। সদর উপজেলার ২টি কূপ থেকেই দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘন ফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলেও জানান তিনি।
সূত্র আরো জানায়, ভোলায় নতুন নতুন কূপ খননের ফলে গ্যাসের মজুদ বাড়ছে। একই সঙ্গে সন্ধান করা হচ্ছে নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্রের। এ ছাড়াও ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় গ্যাসের অস্তিত্ব চিহ্নিত করতে সিসিমিক জরিপ শুরু করা হবে। কিছুদিন আগে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী বাপেক্স নিয়ন্ত্রিত গ্যাস কূপ এলাকা পরিদর্শন করেন। বাপেক্সের তত্বাবধানে এ সব কূপ খনন ও জরিপ হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এর আগের ৭টি কূপে প্রায় দুই ট্রিলিয়নের বেশি ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে। গত মাসে টবগী-২ কূপ খনন শেষে মজুদ গ্যাস উত্তোলনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়। বর্তমানে কেবল ৪টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। প্রতিদিন ১৪০ এমএমসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা গেলেও এর সম্পূর্ন ব্যবহার হচ্ছে না। বর্তমানে ৪টি বিদ্যুৎ প্লান্টসহ ক্ষুদ্র কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। এতে মাত্র ৮০ এমএমসিএফ গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট থেকে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে দৈনিক ৪৮৫ মেগাওয়াট। এদিকে গ্যাসের মজুদ থাকলেও আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। ফলে মজুদ গ্যাসের ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে না।
Leave a Reply